কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনাময় সোনাদিয়াদ্বীপ ঘুরে আসুন

কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনাময় সোনাদিয়াদ্বীপ ঘুরে আসুন !
বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত নগরী কক্সবাজার এসে আপনি দেখতে পাবেন সমুদ্র সৈকত, শহরের মাহাসিংদোগ্রী বৌদ্ধ মন্দির, বার্মিজ মার্কেট, অগ্গমেধা ক্যং, রাডার স্টেশন, হিলটপ সার্কিট হাউজ, হিমছড়ি ঝর্ণা ও সমুদ্র সৈকত, রামুর নবনির্মিত ও পুরনো ঐতিহ্যের ধারক বৌদ্ধ বিহার, রাবার বাগান, চকরিয়াস্থ ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, টেকনাফের সমুদ্র সৈকত, মাথিনের কূপ, সেন্টমার্টিন প্রবালদ্বীপ, ছেঁড়াদ্বীপ, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির ও ক্যাং, সোনাদিয়া দ্বীপ, কুতুবদিয়া বাতিঘর। এসবের সাথে যোগ হয়েছে রামুর উত্তর মিঠাছড়ির ১০০ ফুট সিংহসয্যা বৌদ্ধমূর্তি এবং বোটানিক্যাল গার্ডেন।
কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সুবিধার্থে জেলার পর্যটনস্পট গুলোর ধারাবাহিক বর্ণনা তুলে ধরা হচ্ছে এই বিভাগে। আজ প্রথম পর্বটি সাজানো হয়েছে সম্ভাবনাময় সোনাদিয়া দ্বীপ নিয়ে।
পর্যটকদের আকর্ষণকরার দিক দিয়ে সর্বপ্রথম হচ্ছে বাংলাদেশের কক্সবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলো। এ বিষয়ে কারও কোনো দ্বিমত পোষণ করার অবকাশ নেই। শুধু বাংলাদেশি নয় সারাবছরজুড়েই বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনায় পৃথিবীর এই বৃহত্তম সমুদ্র সৈকতটিমুখরিত থাকে সারাক্ষণ। আর এই কক্সবাজার জেলারই একটি দৃষ্টিনন্দন স্থান হলো মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ। কক্সবাজার ভ্রমণে গিয়ে মহেশখালী না গেলে ভ্রমণটাই বৃথা আর মহেশখালী যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো সোনাদিয়া দ্বীপ দর্শন।
কক্সবাজার জেলা থেকে মহেশখালীর দূরত্ব ১২কিলোমিটার। কক্সবাজার থেকে উত্তর-পশ্চিমে এবং মহেশখালি দ্বীপেরদক্ষিণে সোনাদিয়া দ্বীপটি অবস্থিত। একটি খাল দ্বারা এটি মহেশখালি দ্বীপথেকে বিছিন্ন হয়েছে। মহেশখালী থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে সাগরের বুকে সোনাদিয়াদ্বীপটি অবস্থিত। মহেশখালী উপজেলার অর্ন্তগত হোয়ানক ইউনিয়নে অবস্থিতসোনাদিয়া দ্বীপটির আয়তন ৯ বর্গকিলোমিটার। ম্যানগ্রোভ ও উপকূলীয় বনেরসমন্বয়ে গঠিত এই দ্বীপটি। সাগরের গাঢ় নীল জল, লাল কাঁকড়া, কেয়াবন, সামুদ্রিক পাখি সবমিলিয়ে এক ধরনের রোমাঞ্চকর পরিবেশ সবসময় এই দ্বীপেবিরাজ করে।
মহেশখালী থেকে সোনাদিয়া দ্বীপ যেতে পথেরসবকিছুই মনে হবে শিল্পীর তুলিতে আঁকা কোনো এক অকৃত্রিম ছবি চোখের সামনেভাসছে। এ দৃশ্য যেনো কোনোদিন ভোলার নয়। এখানকার খালের পানি এতোটাই স্বচ্ছ ওটলটলে, দেখে মনে হবে যেনো কোনো কাঁচের ওপর দিয়ে নৌযানটি এগিয়ে চলেছে। যাদেখলে শত বছরের দু:খ-কষ্ট এক নিমেষেই ভুলে যেতে বাধ্য। সমুদ্র থেকে সৃষ্টিহয়ে ভিতরের দিকে গিয়ে খালটি কয়েকটি শাখা প্রশাখায় ছড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্তপ্রবাহিত হয়েছে। খালের দু-পাশে সবুজ বন। এসব বনে রয়েছেকেওড়া, হারগোজা, উড়িঘাস এবং কালো ও সাদা বাইন বৃক্ষ।
প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের মতো এই দ্বীপটিসমুদ্রের বুকে অবস্থিত হলেও সেন্টমার্টিন দ্বীপের মতো এখানে তেমন জনবসতিএখনো গড়ে উঠেনি। মূলত এই দ্বীপের বেশিরভাগ লোকই জেলে এবং কিছু লবণ চাষীরয়েছে। অন্যভাবে বলা যায় জীবনযাত্রার মান খুব ভালো নয় বিধায় এখানে জনবসতিগড়ে উঠছে না। কেননা এখানে কোনো হাট-বাজার নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদেরবাজার-সদাইয়ের জন্য একমাত্র ভরসা ছোট ছোট মুদির দোকানগুলো। এই দ্বীপের যেবিষয়টি পর্যটকদের মনে সারাজীবন স্থান করে নিতে সক্ষম সেটি হলো এখানকার চা।অত্যন্ত সাধারণ মানের হলেও এখানকার চায়ের স্বাদ কখনো ভোলার নয়।
দ্বীপটির শেষপ্রান্ত পশ্চিম দিকে বেশখোলামেলা। এই স্থানটিতে কোনো জনবসতি নেই। সবুজ ঘাসের কার্পেটে মোড়ানো খোলামাঠ, নির্জনতা ও অফুরন্ত বাতাস সব মিলিয়ে মন প্রশান্তিতে ভরে যায়। এইদ্বীপের লা মাঠে বসলে মনে হবে যেনো অজানা-অচেনা কোনো দ্বীপে আপনি একা।আপনার পাশে কেউ বসে থাকলেও মনে হবে আপনি একা, চারপাশে লাল কাঁকড়ারছুটাছুটি। সবকিছুই মনে হবে সিনেমার দৃশ্যের মতো। অনেকের মতে সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের চেয়ে সোনাদিয়া দ্বীপের প্রাকৃতিকসৌন্দর্য অনেক এগিয়ে। এই দ্বীপের কিছু অংশে তরমুজের চাষ করা হয়। তরমুজেরমৌসুমে গেলে এখানকার তরমুজের স্বাদ বাড়তি পাওনা।
পর্যটকদের জন্য সোনাদিয়া দ্বীপে একটিবেসরকারি সামুদ্রিক কচ্ছপের হ্যাচারি রয়েছে। দ্বীপ থেকে কচ্ছপের ডিম সংগ্রহকরে সেগুলো এখানে সংরক্ষণ করে তারপর সেসব ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে সমুদ্রেছেড়ে দেওয়া হয়।
যাতায়াত ব্যবস্থা:
ঢাকার কমলাপুর, সায়েদাবাদ, কল্যাণপুর ওদেশের যেকোনো স্থান থেকে বাস, ট্রেন বা অন্য কোনো বাহনে করে প্রথমে যেতেহবে কক্সবাজার। কক্সবাজার শহরের কস্তুরা ঘাট থেকে স্পিডবোট বা ইঞ্জিনচালিত নৌকায়করে তারপর যেতে হবে মহেশখালী। মহেশখালী গোরকঘাটা থেকে ঘটিভাঙা পর্যন্তপথটুকু যেতে হবে বেবিট্যাক্সিতে করে। মহেশখালীর গোরকঘাটা থেকে ঘটিভাঙারদূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। সেখান থেকে আবার ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে সোনাদিয়াদ্বীপে যেতে হয়। ঘটিভাঙা নেমে খেয়ানৌকায় সোনাদিয়া চ্যানেল পার হলেইসোনাদিয়া।
ভাটার সময় খালে খুব বেশি পানি থাকে না।সোনাদিয়া যাওয়ার দুটো উপায় আছে। হেঁটে যাওয়া অথবা জোয়ার এলে নৌকা। প্রতিদিনজোয়ারের সময় পশ্চিম সোনাদিয়া থেকে ঘটিভাঙা পর্যন্ত মাত্র একবার একটিট্রলার ছেড়ে আসে। এই ট্রলারটিই কিছুক্ষণের মধ্যে যাত্রীদের তুলে নিয়ে আবারফিরতি যাত্রা করে।
উল্লেখ্য কক্সবাজার থেকেও সরাসরি স্পিডবোটরিজার্ভ করে সোনাদিয়া দ্বীপে যাওযার ব্যবস্থা রয়েছে। সেজন্য নির্ধারিতভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হয়। যারা ভ্রমণকে অ্যাডভেঞ্চারময় করতেভালোবাসেন তারা কিছু বাড়তি খরচ করে কক্সবাজার থেকে সরাসরি স্পিডবোটে করেসোনাদিয়া দ্বীপে যেতে পারেন।
থাকা-খাওয়া:
সোনাদিয়া দ্বীপে পর্যটকদের থাকার জন্যকোনো আবাসিক হোটেল নেই। খাওয়ারও তেমন কোনো নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই। স্থানীয়লোকজনকে টাকা দিলে তারা খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। আর সোনাদিয়া দ্বীপেরাত্রি যাপনের ক্ষেত্রেও ভরসা সেই স্থানীয় বাসিন্দাদের। তবে রাতে থাকারকষ্টের কথা চিন্তা করে যারা সূর্যোদয়ের আগেই ফিরে আসবেন তারা সোনাদিয়াদ্বীপের আসল সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হবেন। এখানকার সূর্যাস্ত আরও অসাধারণ।সন্ধ্যায় সাদা পালক দুলিয়ে সারি সারি বক উড়ে যায় আপন ঠিকানায়। নীল আকাশেরকপালে কে যেনো দেয় লাল টিপ। আস্তে আস্তে যখন সূর্য হারিয়ে যায় সাগরেরবুকে তখন তৈরি হয় এক মোহনীয় পরিবেশ। আর সোনাদিয়া দ্বীপে রাত্রিযাপন হতেপারে আপনার জীবনের সেরা রাতের একটি। ( চলবে)

No comments

Thanks

Theme images by compassandcamera. Powered by Blogger.