রামকোট বৌদ্ধ বিহার Ramkot Buddhist Vihara

রামকোট বৌদ্ধ বিহার

      ইতিহাসবিদদের রচিত বিভিন্ন গ্রন্থে রামু-কে ‘‘প্যাং-ওয়া/প্যানোয়া’’ অর্থাৎ হলদে ফুলের দেশ হিসেবে বর্ণনা রয়েছে। রামু এলাকাটি একদা আরাকানে একটি প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছিল। রামুর অধিপতিকে রাখাইন রাজারা প্যাঙ-ওয়া-জা: বলে আখ্যায়িত করতেন। তৃতীয় ধন্যাবতী যুগের প্রথম রাখাইনরাজ চেন্দা থুরিয়া (খ্রিস্টপূর্ব ৫৮০-৫২৮) শাসনামলে তাঁর আমন্ত্রণে সেবক আনন্দকে নিয়ে তথাগত গৌতম বু্দ্ধ আরাকানে এসেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। গৌতম বুদ্ধের সাথে আরো পাঁচশত  শিষ্য ছিলেন বলেও জনশ্রুতি আছে।  তথায় এক ধর্ম সম্মেলনেসেবক আনন্দকে উদ্দেশ্য করে গৌতম বু্দ্ধ বলেন, ‘‘হে আনন্দ! ভবিষ্যতে পশ্চিম সমুদ্রের পূর্ব উপকূলে পাহাড়ের উপর আমার বক্ষাস্থি স্থাপিত হবে। তখন এর নাম হবে ‘রাং-উ’।’’ ‘রাং-উ’ রাখাইন শব্দ এর শাব্দিক অর্থ বক্ষাস্থি। ‘রাং’ অর্থ বক্ষ, ‘উ’ অর্থ বক্ষাস্থি। ভাষাতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় ধ্বনিতাত্ত্বিক এবং অর্থগত দিক থেকে রামু শব্দের সংগে রাং-উ শব্দের মিল রয়েছে। মৌর্য বংশের তৃতীয় সম্রাট অশোক (খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩-২৩২) কর্তৃক স্থাপিত ৮৪ হাজার ধাতু চৈত্যের মধ্যে রামুর এ চৈত্যটি অন্যতম। খ্রিস্টপূর্ব ৩০৮ অব্দে নির্মিত ঐতিহাসিক রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের পাহাড় চূঁড়ায় মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। সময়ের বিবর্তনে রামকোটের অস্তিত্ব বিলীন হলে  ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীলংকা থেকে আগত পুরোহিত জগৎ জ্যোতি মহাস্থবির রামকোট বৌদ্ধ বিহারটি সংস্কার পূর্বক পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে একটি বনাশ্রম রয়েছে যেখানে প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপনা ও পুরাকীর্তি রয়েছে। প্রতি বছর  প্রচুর তীর্থযাত্রী-পূজারী ও পর্যটকরা এখানে ভীড় করেন। আশ্রমের পাদদেশে ব্রাজিল, ফ্রান্স, ইটালীসহ অনেক দেশের আর্শীবাদপুষ্ট ‘‘জগৎ জ্যোতি শিশু সদন’’ নামে একটি বৌদ্ধ অনাথ আশ্রমালয় রয়েছে। এ আশ্রম নির্মাণকালে রামুর রাখাইন সম্প্রদায়ের শশ্মানে স্থিত এতদঞ্চলে দানবীর প্রয়াত পোওয়েজা: সেজারী (খিজারী দালাল) এর বংশধরদের সমাধিস্তম্ভ ধ্বংস করা হয় বলে রামুর রাখাইনসহ সচেতন রামুবাসীদের আক্ষেপ রয়ে গেছে। আশ্রমে অনেক অনাথ ছেলেমেয়ে রয়েছে তারা বিনা পয়সা এখানে পড়ালেখা করে যাচ্ছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রামকোটে বসে ‘‘রাজর্ষি’’ উপন্যাসটি রচনা করেন। কবিগুরুই হলদে ফুলের দেশ রামুকে রম্যভূমি হিসেবে সর্বপ্রথম আখ্যায়িত করেন। অবশ্য এককালে বৌদ্ধ সংস্কৃতির পাদপীঠ হিসেবে রম্যভূমি’র নামে বর্তমান রামু প্রসিদ্ধ ছিল।
কিভাবে যাওয়া যায়: সড়ক পথে

No comments

Thanks

Theme images by compassandcamera. Powered by Blogger.