মেঘ-পাহাড়ের খেলা চলছে বান্দরবানে Cloud-playing is going on in Bandarban

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান। বর্ষায় সে সৌন্দর্য বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। দেখে মনে হবে সমগ্র পাহাড়ি জেলা একটি সবুজ কার্পেটের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টিতে পাহাড় সেজেছে রাজকন্যার মতো। চলছে মেঘ পাহাড়ের খেলা। যেদিকে চোখ যায় সবুজে সবুজে বর্ণিল অন্য রকম একরূপ।




পাহাড়ের বৃক্ষগুলোও যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে বর্ষায়। চারদিকে শুধুই সবুজের সমারোহ, বিশুদ্ধ শান্তির পরশ বয়ে চলে। প্রকৃতি যেন সবটুকু উজাড় করে দিয়ে পেখম মেলে বসেছে সৌন্দর্য বিকাশে। সৌন্দর্যপিপাসু যে কোনো মনই হারিয়ে যেতে চাইবে এই সৌন্দর্যে।
জীবনের ধরাবাধা ছক থেকে বেরিয়ে আপনিও হারিয়ে যেতে পারেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে। বর্ষায় পাহাড় দেখার মজায় আলাদা। ঘুরে বেড়াতে পারেন বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন স্পট নীলাচলের মেঘে ঢাকা পাহাড়ে, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রের লেকের স্বচ্ছ জলে। ভাসাতে পারেন সাঙ্গু নদীতে ডিঙি নৌকা।
আর মেঘ ছঁতে ঘুরে আসতে পারেন নীলগিরি, জীবন নগর, চিম্বুক, কিওক্রাডং পাহাড়ে। পাহাড়ে ভ্রমণের যাদের বেশি পছন্দ, তারা বেড়িয়ে পড়ুন বান্দরবানের উদ্দেশে। দেখে আসুন বর্ষায় সবুজ পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথের সৌন্দর্য।
পার্বত্য চট্টগ্রামের এ জেলায় রয়েছে বেড়ানোর মতো অনিন্দ সুন্দর সব জায়গা। যেদিকেই চোখ যায় শুধুই যেন সুন্দরের খেলা। ছোট্ট শহর বান্দরবানের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে বোমাং রাজার বাড়ি। বোমাং রাজাসহ রাজবাড়িতে এখনো রাজার উত্তরসূরিরা বসবাস করেন। শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে পাহাড়ি নদী সাঙ্গু। এ নদীর উৎপত্তি স্থলও বান্দরবান এবং বাংলাদেশে।
আর বর্ষায় রূপসী বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন এলাকা নীলাচলের সৌন্দর্য থাকে ভিন্ন। সাদা মেঘ ছুঁয়ে যায় বর্ষার নীলাচলে। দূর আকাশের মেঘ ভেসে আসে নীলাচলের চূড়ায়। ইচ্ছে হলেই ছুঁয়ে দেখতে পারেন পর্যটকেরা!
প্রকৃতির কন্যা হিসেবে বান্দরবান সারাদেশে এক নামে পরিচিত। শুধু এ নামেই নয়, পার্বত্য এ জেলাটির রয়েছে আরও অনেকগুলো নামও। পাহাড় কন্যা, পর্যটন কন্যা, বাংলার দার্জিলিং, নৈসর্গিক ভূমি এবং অনেকে মেঘ পাহাড়ের দেশও বলে থাকেন বান্দরবানকে।
আর নামগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভালো লাগা আর ভালোবাসা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে প্রকৃতি সাজিয়েছে দু’হাত ভরে। ভ্রমণপিপাসু মানুষের চাহিদা মেটানোর সব উপকরণই রয়েছে এখানে।
দেশের অন্যতম এ পর্যটন শহর বান্দরবানকে প্রকৃতির নিপুণ শিল্পকর্মের অনন্য স্থান বললে বোধহয় ভুল হবে না। আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে পাহাড়ের দাঁড়িয়ে থাকা, সফেদ মেঘেদের ভেলা, পাহাড় চূড়া থেকে প্রবাহিত ঝর্ণাধারা, সাঙ্গু নদীর মোহনায় সাজানো পাথরের সমাহার, নদীর পাড়ে পাথরের সান বাঁধানো প্রাকৃতিক দেয়াল, উঁচু পাহাড়ে গহিন অরণ্য ও সুনসান নীরবতার কারণে পর্যটকদের সহজেই কাছে টানে বান্দরবান।
ঋতু বৈচিত্র্যের সঙ্গে বান্দরবানের রূপ বদলায়, সৌন্দর্যে আসে বৈচিত্রতা। তবে একেক ঋতুতে বান্দরবানের সৌন্দর্য একেক রকম। বর্ষায় পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের রূপ লাবণ্য যেন ভিন্নমাত্রায় ফুটে উঠে। ধূলি ধূসরিত পরিবেশ হয়ে উঠে স্বচ্ছ। নীলাচল, নীলগিরি, চিম্বুক আর কিওক্রাডং পাহাড়ের সবুজাভ চূড়ায় শুভ্র মেঘেদের বিচরণ এবং যখন-তখন অঝর ধারায় বৃষ্টিতে পাহাড়ি পথ হয়ে ওঠে বিপদসংকুল। শিহরণ জাগে মনে।
সেই সঙ্গে কয়েক হাজার ফুট ওপর থেকে নেমে আসা রিজুক, জাদিপাই, চিংড়ি, নাফাকুম, ঝুরঝুড়ি, শৈলপ্রপাতের ঝর্ণাধারার দৃশ্য যে কারোরই নয়ন জুড়ায়। আবার শীতে অন্য রূপে হাজির হয় বান্দরবান। চারিদেকে তখন সবুজের সমারোহ, পাহাড়ের চূড়ায় গহিন অরণ্য। সাঙ্গু নদীর স্বচ্ছ জলে নৌ-ভ্রমণ, অবগাহনের আনন্দই আলাদা।
জীবনের ছক থেকে বেরিয়ে হারিয়ে যেতে পারেন নীলাচলের মেঘে ঢাকা পাহাড়ে, মেঘলা লেকের স্বচ্ছ জলে, ভাসাতে পারেন ডিঙি নৌকায় অথবা মেঘ ছঁতে ঘুরে আসতে পারেন নীলগিরি। বৃষ্টির সময়ে পাহাড় ঘেরা বান্দরবান জেলাটি যেন একটি সবুজ কার্পেটের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। যেদিকে দু’চোখ যাবে সবুজে সবুজে বর্ণিল এক নতুন সাজে ধরা দেবে আপনার কাছে।
জেলা শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের গড়ে তোলা দর্শনীয় স্থান হচ্ছে নীলাচল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে শৈল্পিক ছোঁয়ার স্পর্শে নীলাচল পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় একটি স্পটের নাম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় এটি অবস্থিত।
দৃষ্টিনন্দন পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, সিঁড়ি, গোলঘর, ভাস্কর্য এবং কটেজ। নীলাচল থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য অনায়াসে দেখা যায়। তবে নীলাচল পর্যটন স্পটে দিনের চেয়েও রাতের চাঁদের আলোয় সময় কাটানো অতি রোমাঞ্চকর। বর্ষায় মেঘ ভেসে বেড়ায় নীলাচল পাহাড়ে। মেঘে ভেসে বেড়ানোর ইচ্ছা পূরণ হবে এখানে এলে।
নীলগিরি পর্যটকদের কাছে স্বপ্নিল একটি নাম। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন কার না জাগে, মেঘে গা-ভাসানোর ইচ্ছে কার না করে। তবে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন পূরণ না হলেও মেঘে গা-ভাসানো সম্ভব বান্দরবানে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত নীলগিরি পর্যটন স্পটে হাত বাড়ালেই মেঘ ছোঁয়া যায়। অনেকটা মেঘের দেশে ভেসে বেড়ানোর মতো।
পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সড়কের ৪৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় নীলগিরি পৌঁছাতে। বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক পাহাড় থেকে থানচি উপজেলা সড়কে আরও ২৬ কিলোমিটার। পর্যটন স্পট নীলগিরিতে মেঘ আর রোদের মধ্যে চলে লুকোচুরি খেলা। কখন এসে মেঘ আপনাকে ভিজিয়ে দিয়ে যাবে বুঝার অবকাশ নেই। ঘন মেঘের চাঁদরে হারিয়ে যেতে নীলগিরি হচ্ছে উপযুক্ত স্থান। সেনা নিয়ন্ত্রিত নীলগিরিতে আকাশনীলা, মেঘদূত এবং নীলাতানাসহ বিভিন্ন নামে সাজানো কটেজগুলো খুবই আকর্ষণীয়।
অনেক সৌন্দর্যের সমৃদ্ধ একটি নাম মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স। জেলা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মেঘলায় রয়েছে লেকের ওপর আকর্ষণীয় দুটি ঝুলন্ত সেতু, ক্যাবল কার, ট্যুরিস্ট ট্রেন, শিশু পার্ক, সাফারি পার্ক, চিড়িয়াখানা, স্পিড বোটে ভ্রমণের সুবিধা এবং ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলা চা বাগান।
শৈল প্রপাত ঝর্ণা হচ্ছে প্রাকৃতির অপরূপ সৃষ্টি। বান্দরবান-রুমা এবং থানচি সড়কের ৫ মাইল নামক স্থানে প্রাকৃতিক এই ঝর্ণার অবস্থান। যেতে সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। শৈলপ্রপাত ঝর্ণার হিমশীতল পানি সর্বদা বহমান। মনমাতানো এ দৃশ্য স্মৃতিতে ধরে রাখার মতো। এ স্পটের পাশেই স্থানীয় বম জনগোষ্ঠীর পাহাড়ি নারীরা কোমর তাঁতে বুনা কাপড়সহ বিভিন্ন পন্যসামগ্রী বিক্রি করেন।
এ ছাড়াও বান্দরবানে উৎপাদিত মৌসুমি ফলমূল সব সময় পাওয়া যায় এখানে। স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন স্বর্ণ মন্দির। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান হলেও পর্যটকদের কাছে এটি বেশ আকর্ষণীয়। স্থানীয়দের কাছে এটি পরিচিত বৌদ্ধ ধাতু জাদি নামে। মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র থেকে আনা শ্রমিক এবং শিল্পীরা এটি নির্মাণ করেছে। জাদিতে রয়েছে ছোট, বড় প্রায় শতাধিকেরও বেশি বৌদ্ধ মূর্তি।
আরও রয়েছে চিম্বুক পাহাড়। বাংলার দার্জিলিং নামে পরিচিত এ দর্শণীয় স্থানটি। পাহাড়ের চূড়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট উচ্চতায় এটি অবস্থিত। চিম্বুক পাহাড়কে ঘিরেই পাহাড়ি মুরুং (ম্রো) জনগোষ্ঠীর বসবাস। জেলায় সব কটি উপজেলার সঙ্গে টেলিযোগাযোগের ব্যবস্থা রক্ষার জন্য চিম্বুকে বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড একটি বেজ স্টেশন ও টাওয়ার স্থাপন করেছে।
নীল জলের প্রাকৃতিক জলাশয় কিংবদন্তি বগা লেক। লেক সৃষ্টির পেছনে রয়েছে অনেক অজানা কাহিনী। পাহাড়িরা এটিকে দেবতার লেক বলেও চিনে। পাহাড়ের ওপরে সান বাঁধানো বেষ্টনীতে প্রায় ১৫ একর জায়গাজুড়ে বগা লেকের অবস্থান। এই লেকের পানি দেখতে নীল রঙের। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় দুই হাজার ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি বগালেক।
বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ লেক। পাহাড়ের ওপর থেকে অবিরাম ঝরে পড়ছে রিজুক ঝর্ণার পানি। সাঙ্গু নদীপথে রুমা থেকে সামনের দিকে যেতেই ঝমঝম শব্দে ঝর্ণার পানি ঝড়ে পড়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। রিজুক ঝর্ণার হিমশিতল স্বচ্ছ পানি খুবই ঠান্ডা। আর দেশের সর্বোচ্চ পর্বত চূড়াগুলোও এ জেলায় অবস্থিত। ন্যাচারাল অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব ও নর্থ আল পাইন বাংলাদেশের দাবি সাকা হাফং পাহাড় চূড়া দেশের সর্বোচ্চ পর্বত চূড়া। যার উচ্চতা ৩৪৮৮ ফুট।
আর তাজিংডং (বিজয়) পাহাড়ের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় ৩৪০০ ফুট। এ ছাড়া কিওক্রাডং পাহাড়ের উচ্চতা ৩১৭২ ফুট। পর্বত চূড়াগুলোর প্রথমটি থানচি উপজেলায় এবং অপর দুটি রুমা উপজেলায় অবস্থিত। রুমা থেকে তাজিংডং (বিজয়) চূড়ার দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং কিওক্রাডং পাহাড়ের দূরত্ব রুমা উপজেলা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার। পাঁয়ে হেঁটে যেথে হয় পর্বত চূড়াগুলোতে। তবে শুষ্ক মৌসুমে জিপ গাড়িতে করে তাজিংডং চূড়ার কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব।
অপরদিকে রহস্যময় থানছি উপজেলা ভ্রমণ দারুণ রোমাঞ্চকর। বান্দরবানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শিখড়ে রয়েছে দুর্গম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থানছি। পাহাড়, আকাশ, নদী এবং ঝর্ণা এখানে মিলেমিশে একাকার। সবুজ পাহাড়ের গাঁয়ে পরগাছার মতো জড়িয়ে আছে সাদা মেঘ। ভাগ্য সহায় হলে যাত্রাপথে রাস্তায় মেঘ এসে ধরা দিতে পারে আপনাকে। জেলা সদর থেকে থানছি উপজেলার দূরত্ব ৮৫ কিলোমিটার। পাহাড়ের গা-ঘেসে উঁচু নিচু রাস্তায় ছুটে চলে গাড়িগুলো। হঠাৎ নিচের দিকে তাকালে শিউড়ে ওঠে গা, কত উঁচু দিয়ে চলাচল করছে গাড়ি। যাত্রীবাহী বাস এবং জিপ গাড়ি দুটোরই ব্যবস্থা রয়েছে। বাসে থানছিতে যেতে সময় লাগে প্রায় চার ঘণ্টা।
থানছি থেকে ইঞ্জিনচালিত বোটে যেতে হবে দর্শনীয় স্থান রেমাক্রীতে। মধ্যেখানে নদীর চড় বেয়ে পাঁয়ে হাঁটার পথও রয়েছে। সব মিলিয়ে রেমাক্রী পৌঁছাতে সময় লাগবে তিন থেকে চার ঘণ্টা। রেমাক্রীতে পাথরের ফাঁকে ফাঁকে প্রবাহিত সাঙ্গু নদীর স্বচ্ছ পানির দৃশ্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের। রেমাক্রীতে সাঙ্গু নদীকে মনে হয় পাথরের নদী এবং বয়ে চলেছে ঝর্ণার স্বচ্ছ পানি। সত্যিই অন্য রকম এক ধরনের সৌন্দর্য লুকিয়ে রয়েছে এখানে।
রেমাক্রীতে পাথরে ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে বিপদের শঙ্কা। রেমাক্রীমুখ থেকে নাফাকুম ঝর্ণা এবং বাদুর গুহা যেতে পাহাড়ের ঢালে ঢালে প্রায় তিন-চার ঘণ্টা পাঁয়ে হাঁটার রাস্তা। দূরত্ব প্রায় এগারো-বারো কিলোমিটার। নেই নাফাকুম যাবার কোনো রাস্তাও। ভ্রমণপিপাসুরা পাহাড়ের ঢাল বেয়ে বন-জঙ্গল মারিয়ে নাফাকুমে যাচ্ছেন। যাবার পথে ছোট ছোট কয়েকটি খাল-ছড়াও পার হতে হয় পর্যটকদের।
তবে চলাচলে রাস্তা এবং থাকার কোনো ব্যবস্থা না থাকলেও ভ্রমণে নিরাপত্তা স্বার্থে পর্যটকদের সঙ্গে একজন স্থানীয় গাইড নেওয়ারও নিয়ম রয়েছে প্রশাসনের। নাফাকুম ঝর্ণার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে ভ্রমণের সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে নিমিষেই।
আর সবুজের মাঝখানে প্রাকৃতিক লেক। নাম তার প্রান্তিক লেক। প্রায় আড়াই একর পাহাড়ি এলাকাজুড়ে প্রান্তিক লেকের অবস্থান। বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের হলুদিয়ার সন্নিকটে প্রান্তিক লেক অবস্থিত। অপূর্ব সুন্দর লেকের চারপাশ নানান প্রজাতির গাছ গাছালিতে ভরপুর। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলেও প্রান্তিক লেক এখনো অবহেলিত। পর্যটন স্পট হিসেবে প্রান্তিক লেকের পরিচিতি কম হলেও লেকের সৌন্দর্য সত্যি দৃষ্টি নন্দন।
কীভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে সরাসরি এসি-ননএসসি বাসে আসতে পারবেন বান্দরবান। তবে চট্টগ্রাম হয়েও বান্দরবান আসতে পারবেন। চট্টগ্রামের বহাদ্দাহার বাস টার্মিনাল থেকে ত্রিশ মিনিট পর পর পূরবী-পূর্বাণী নামে দুটি বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। বাসের ভাড়া ১১০ টাকা। বাসে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা থেকে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত।
কোথায় থাকবেন : বান্দরবানে পর্যটকদের থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট এবং গেস্ট হাউস আছে। হলিডে ইন রিসোর্টে এসি-ননএসি দু’ধরনের রুম ভাড়া পাওয়া যায়। এ ছাড়াও তাঁবুতে রাত্রী যাপনের ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। এখানে থাকতে প্রতিদিন রুম প্রতি গুনতে হবে দেড় হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ হলিডে ইন- ০১৫৫৬৯৮০৪৩২। ফোন-০৩৬১-৬২৮৯৬। হলিডে ইনের খাবারের প্রশংসাও রয়েছে। পালকি গেস্ট হাউসে হচ্ছে জেলা শহরের মধ্যেই পাহাড়ের উঁচুতে এসি-ননএসি দু’ধরনের রুমেই থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। এখানে থাকতে হলে প্রতিদিন গুনতে হবে- ১২শ থেকে ২৫শ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ-০৩৬১-৬৩১৫৫৫, মোবাইল-০১৮১২৬৮৬৭৫৫। ভেনাস রিসোর্টেও পর্যটকদের থাকার জন্য অনেক আকর্ষণীয় কটেজের সুব্যবস্থা রয়েছে। সঙ্গে খাবারের রেস্টুরেন্ট আছে। এখানে থাকতে হলে প্রতিদিন গুনতে হবে দুই থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ:-০৩৬১-৬৩৪০০। পর্যটন মোটেলেও পর্যটকদের সপরিবারে রাত্রী যাপন এবং খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে রাত্রী যাপনে গুনতে হবে রুমপ্রতি দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ ফোন-০৩৬১-৬২৭৪১।
কীভাবে ঘুরে বেড়াবেন : বান্দরবানের বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে বেড়াতে ভাড়ায় চালিত বিভিন্ন ধরনের গাড়ি পাওয়া যায়। তবে দু-একজনের জন্য রিজার্ভ পর্যটকবাহী গাড়িগুলোর ভাড়া অনেকটা বেশি। সে ক্ষেত্রে দলবল নিয়ে সপরিবার-পরিজন নিয়ে একসঙ্গে বান্দরবান ঘুরে বেড়াতে আসলে খরচ অনেকটয়া সাশ্রয়ী হয়। সিএনজি এবং মাহেন্দ্র গাড়িতে করেও পর্যটন স্পটগুলো সহজে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব। এ ছাড়াও অধিকাংশ পর্যটন স্পটের রুটে বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। সেগুলোতে করে যাতায়াত করলে খরচ আরো কমবে। তবে সময় লাগবে একটু বেশি।
জেলা প্রশাসকের বক্তব্য : জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, নতুন আরও কিছু দর্শণীয় পর্যটন স্পট খুঁজে বেরা করা হচ্ছে। পর্যটন স্পটগুলোর সৌন্দর্য বিকাশে কাজ চলছে। পর্যটনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকার নানামুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে। নিরাত্তাব্যবস্থার কথা মাথায় রেখেই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে পর্যটকদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।

No comments

Thanks

Theme images by compassandcamera. Powered by Blogger.